ঢাবি সংবাদদাতা : বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র্যাংকিং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, কিউ এস র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম।
তিনি বলেছেন, র্যাংকিংয়ের উৎপত্তি হয়েছিল একটি কমার্শিয়াল ভেঞ্চার নিয়ে। এটি মথায় রাখতে হবে সবার। রাশিয়ার অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো কোনোদিন র্যাংকিংয়ে আসে না। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং তার পেছনের বাজেট র্যাংকিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে এবং সেটা আমলে নেয় অনেক প্রতিষ্ঠান।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন উপাচার্য।
সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশন প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে ঢাবি জায়গা না পাওয়ায় এ সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি কিউএস র্যাংকিং নামে একটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। দুটো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই র্যাংকিং করে। একটি টাইমস হায়ার এডুকেশন আরেকটি কিউএস র্যাংকিং।
‘কিউএস র্যাংকিং সমীক্ষা দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম অবস্থানে। হায়ার এডুকেশন দেখিয়েছে ৪১৭টির মধ্যে নেই। এই র্যাংকিংগুলো কোন মানদণ্ডে হয় সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকবে’।
‘কিন্তু একটি বিতর্কের বিষয় বলা যায় কিউএস র্যাংকিং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) লন্ডনভিত্তিক কিউএসের একজন প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন, আমরা যদি তথ্য দেই তাহলে তারা আমলে নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করবেন’।
উপাচার্য বলেন, ‘তাহলে মানেটা হলো এরকম যে, আমাদের তথ্যগুলো/ডাটাগুলো তাদের কাছে নেই। এবং সেগুলো তাদের কাছে উপস্থাপিত হলে এই বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে আওতাভুক্ত হবে’।
‘এটা হলো টাইমস হায়ার এডুকেশনের কথা। আর কিউএস র্যাংকিং প্রতিবছর ফ্রি সোর্সের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যায়ন করে থাকে। তারা জরিপ প্রকাশ করেছে কিন্তু আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে প্রতিবছর চিঠি দিয়ে জানায়। এ বছর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম।‘
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং ডাকসু নেতাদের মতামত উপাচার্য আমলে নিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় প্রতিফলন ঘটুক। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ এর মধ্যে আছে কী ৫০০ এর মধ্যে নাই, ১২৭তম আছে কী ১০ এর মধ্যে নাই সেটি নয়’।
‘আমরা চাই ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠতে, ক্রম অগ্রগতি, ক্রম উন্নয়ন ঘটাতে। সেটি যদি ঘটাতে চাই তাহলে এখানে অভিমত ব্যক্ত হয়েছে সেই অভিমতসমূহের প্রতিফলন রাখতে হবে’।
সেমিনারে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বেকার সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা শেখার আগ্রহ হারানোয় দেশের শিক্ষা পদ্ধতির মান অবনতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বেকার সমস্যা অনেক বেশি। এজন্য চাকরি নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানার্জনের পরিবর্তে বিসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিজেদের প্রস্তুত করতে ব্যস্ত থাকে।’
শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনার পরিচালনা করেন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাদী আল মুহতাসীম নিবির। সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবীর।
ঢাবির প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ড. মোহাম্মাদ সামাদ, প্রক্টর একেএম গোলাম রাব্বানী, ঢাবি রেজিস্ট্রার ড. এনামুজ্জামান, বিটিভির পরিচালক হারুনুর রশিদ, ডাকসুর কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেমিনারে অংশ নেন।
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ