হিমেল তালুকদার, ঠাকুরগাঁও : ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় আ’লীগ ঘোষিত দলে অনুপ্রবেশকারির তলিকায় নামও রয়েছে তার, অথচ তিনিই এখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হলেন! আর এ ঘটনা ঘটেছে আওয়মী লীগের সভাপতি মন্ডলীর অন্যতম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি’র এলাকায়।
এমনকি তিনি নিজে সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন ৬টি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সা. সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে তা অনুমোদনের জন্য থানা কমিটির বরাবর পেশ করেন এবং থানা কমিটি কোনরূপ যাচাই-বাছাই না করেই তা অনুমোদন দিয়ে দেন।
গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি রাতে) জেলা আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক এ্যাড. নাসিরুল এর ফেসবুক আইডিতে জেলা আ’লীগের প্যাডে এমপি রমেশ চন্দ্র সেন স্বাক্ষরিত ৬টি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সা. সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে একটি পোস্ট দিলে নিমিষেই তা ভাইরাল হয়ে পড়ে। সমালোচনা শুরু হয় জেলা জুড়ে।
জানা যায়, ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে জামায়াত-বিএনপি প্রবণ এলাকা আখানগর ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আ’লীগ থেকে প্রকাশিত দলের অনুপ্রবেশকারি মো. রোমান বাদশা। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওই ইউনিয়নের সাবেক সা. সম্পাদক মো. রখছেদুল হক চৌধূরী স্বপন।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আখানগর ইউনিয়ন আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সামাউল বলেন, নেত্রী যেখানে বিভিন্ন দল থেকে আ’লীগে আসা অনুপ্রবেশকারিরা যাতে দলের পদ-পদবি না পান সেজন্য অনুপ্রবেশকারিদের তালিকা তৈরী করে তা জেলায় জেলায় প্রেরণ করেছেন, অথচ এখানে দলের ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে আসা অনুপ্রবেশকারি রোমান বাদশাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে তাকে পুরষ্কৃত করা হলো। আর এতে বাদ পড়লো দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়াও ২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনে আখানগর ইউনিয়নের ভেলারহাট সেন্টারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নারকীয় তাণ্ডব চালায় এ রোমান বাদশা।
আখানগর ইউনিয়ন আ’লীগের আরেক নেতা বিনোদ জানান, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনের দিন যে ব্যক্তি সংখ্যালঘু ভোটারদের উপর তাণ্ডব চালিয়ে আমার স্বর্ণের দোকান লুটপাট করেছিলো আজকে তাকেই সভাপতির পদ দেওয়া হলো। তাহলে কি এ ইউনিয়নে একজনও প্রকৃত আ’লীগার নেই, যে দল সামলাতে পারবে? নাকি সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য তাকে পুরষ্কৃত করা হলো?
এ বিষয়ে জানতে রুহিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বাবু জানান, প্রতিটি ইউনিয়নেই দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আখানগর ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি রোমান বাদশা এক সময় বিএনপি করতেন সেটা ঠিক, কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকার দশ বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে শক্ত কোন অবস্থান তৈরী না হওয়াসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে কাউন্সিলর ও সকল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
ইউনিয়ন আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সভাপতি-সা. সম্পাদক নির্বাচিত না করে গোপন স্থান থেকে সভাপতি-সা. সম্পাদকের নাম ঘোষণা আসছে কি না -এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গোপনে সভাপতি-সা. সম্পাদক নির্বাচিত করা হচ্ছে কথাটি ভুল। আসলে সম্মেলন চলাকালীন কাউন্সিলররাই অত্র এলাকার আ’লীগের অভিভাবক রমেশ চন্দ্র সেনকে সভাপতি-সা. সম্পাদক নির্বাচনের দায়িত্ব এবং উনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে জেলা-উপজেলা ও থানা আ’লীগ নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউনিয়ন কমিটিগুলো ঘোষণা করা হচ্ছে।
সময় জার্নাল/
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ