নওগাঁর মহাদেবপুরের শামীম ভালোবেসে গত বছর বিয়ে করেছিলেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর মেয়ে হালিমা খাতুন (২২) কে। বছর ঘুরতেই ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু বিধিবাম হালিমার। কন্যা সন্তানকে মেনে নিতে পারেননি শামীম। শুরু হয় মনমালিন্য। এরপর ঝগড়া-ঝামেলা। বাড়ে দূরত্ব। পৃথক থাকা শুরু করেন দুজন। মেয়েসহ বাবার কাছে ঢাকায় থাকতে শুরু করেন হালিমা।
হালিমাকে না জানিয়ে দেড় মাস আগে আরেকটি বিয়ে করেন শামীম। কয়েকদিন পরই বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন হালিমা। তখন তিনি শামীমকে ফোন করে তাদের মেয়েকে নিয়ে যেতে চাপ দেন। তা না হলে শামীম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে মামলা করবেন বলেও জানান হালিমা।
হালিমার এমন কথায় ভয়ংকর এক পরিকল্পনা করেন শামীম। তিনি হালিমাকে ফোন করে জানান, তিনি পুনরায় হালিমার সাথে একটি শর্তে সংসার করতে চান। সেটি হলো, তিনি তার মেয়েকে সাথে আনতে পারবেন না। কয়েকদিন ধরে মোবাইল ফোনে শামীমের সু-আচরণে মন গলে যায় হালিমার। একপর্যায়ে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিঃ হালিমা তার মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে শামীমের সাথে দেখা করতে মিরপুর এলাকায় যান।
ঐদিন সকাল নয়টায় হালিমাকে নিয়ে শামীম কল্যাণপুর থেকে বাসে করে নওগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা করেন। বিকাল ৫ টার দিকে নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিক্সা যোগে বর্সাইল বাজারে রওনা করে তারা। পথিমধ্যে সিগারেট কেনার কথা বলে শামীম পাহাড়পুর বাজারে নামেন। এসময় তিনি একটি চাকু কিনে প্যান্টের বেল্টের ভেতরে লুকিয়ে রাখেন। পথিমধ্যে কির্তীপুর বাজারে রাত আনুমানিক ৭ টার দিকে পৌঁছান তারা।
এরপর রিক্সা ছেড়ে দিয়ে হালিমাকে নিয়ে বর্সাইল বাজারের দিকে যেতে থাকেন শামীম। অন্ধকার শীতের রাত। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। চলতে চলতে হালিমাকে নানান কথা বলে রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের জনমানবহীন এক মাঠে নিয়ে যান শামীম। সেখানে গিয়ে শামীম হালিমাকে আরও অনেক রোমান্টিক কথা বলে ভালোবাসা প্রকাশ করে। একপর্যায়ে রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে হালিমার সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা বলে তাকে মাটিতে শোয়ান। আর এই সুযোগেই শামীম মুখ চেপে ধরে কোমরে থাকা চাকুটি দিয়ে জবাই করেন হালিমাকে। লাশ যাতে সনাক্ত করতে না পারে, সেজন্য হালিমার মুখমণ্ডল কেটে বিকৃত করেন শামীম। এরপর পালিয়ে যান।
গত ২৯ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে হালিমার লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের পড়নের পায়জামার পকেটে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরেই হালিমার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারে পুলিশ। বাবাকে জানানো হলে তিনি নওগাঁ এসে লাশটি হালিমার বলে সনাক্ত করেন। এরপর তিনি নওগাঁ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর তদন্তে নামে পুলিশ। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ নিশ্চিত হয় শামীমের সাথেই হালিমার সর্বশেষ কথা হয়েছে। তখন শামীমকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ। গত ০৯ জানুয়ারি ঢাকার কাফরুল থানাধীন বাইশটেক থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে নওগাঁ সদর থানা পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে করলে হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
১০ জানুয়ারি ২০২০ খ্রিঃ শুক্রবার শামীমকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর মাধ্যমেই একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড রহস্য উন্মোচন করে নওগাঁ জেলা পুলিশ।
তথ্যসূত্র : পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ।
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ