ডা. জাহিদুর রহমান :
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সরকার সারা দেশে বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা চালু করেছে। শুরু হয়েছে হাসপাতাল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দিয়ে, পর্যায়ক্রমে সব সরকারি অফিস, সচিবালয়, পিএম অফিস পর্যন্ত এটি চালু হবে। ফলাফলও হয়েছে মারাত্মক। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় সবাই এখন নিয়মিত অফিস করি।
কিন্তু বাংলাদেশের যে প্রতিষ্ঠানে সবচে বেশি ডাক্তার চাকরি করে এবং সবচে বেশি ডাক্তার ফাঁকি দেয়, সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর কি? রোগীর চেয়ে ডাক্তার সংখ্যা বেশি, মেডিকেল অফিসারের চেয়ে অধ্যাপক সংখ্যা বেশি, হাজার হাজার রেসিডেন্ট। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী, টেকনোলজিস্ট নার্স, স্টাফ, নিরাপত্তা বাহিনী ইত্যাদি ইত্যাদি। শুনলে মনে হয় পুরো শাহবাগ এলাকা একদল মানবসেবীতে একেবারে গিজগিজ করছে।
অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। মর্নিং সেশনের পর বেশিরভাগ অধ্যাপকদের পাওয়া যায় না। ডিপার্টমেন্টে গেলে বলবে আউটডোরে, আউটডোরে গেলে বলবে সেমিনারে, সেমিনার হল খালি দেখে ফোন করলে অধ্যাপক বলবেন, “আমি তো বিসিপিএস এ আসছি”! উনি বেতন নিচ্ছেন এক প্রতিষ্ঠান থেকে আর মোটা অংকের সম্মানীর বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করছেন অন্য প্রতিষ্ঠানে! অবশ্য বিসিপিএস এ যেয়ে না পেলে আর কল না দিয়ে আশপাশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে হাজির হওয়াই নিরাপদ। অধ্যাপক মহোদয়কে আশা করি সেখানে পেয়ে যাবেন। আর কোন কারণে মোবাইল বন্ধ পেলে ভাববেন তিনি বিদেশ সফরে আছেন। নিশ্চিত হতে উনার ফেসবুক আইডিতে ঢু মারতে পারেন।
মেডিকেল অফিসাররা আরেক কাঠি সরেস। উনাদের পাওয়া যায় কেবল আউটডোরে কৌটা কোম্পানির ওষুধ লেখা- আর রোগী ভাগানোর সময়। ইনডোরে যান শুধু হাজিরা খাতায় এক সাথে সাত দিনের সই দিতে আর ইউজার ফির টাকাটা নেয়ার সময়। পুরো হাসপাতাল আসলে টিকিয়ে রাখছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা এমডি/এমএস প্রোগ্রামের রেসিডেন্টরা। বিভিন্ন বিভাগের ডিউটি রোস্টার চেক করলেই আমার কথার সত্যতা পাবেন। সেদিন তো শ্যামলী কলেজ গেইট এলাকাতেই উনাদের একজনকে সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাকটিস করতে দেখলাম। বিএসএমএমইউ এর মেডিকেল অফিসার, নিয়মিত বেতন, ভাতা, ইউজার ফি নিচ্ছেন সেখান থেকে। আর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দালাল ব্যবসা করছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের নামগোত্র বিহীন ক্লিনিকগুলোতে। সেই চেম্বারের ছবি আবার ফেসবুকেও দিচ্ছেন! এ কোন দুনিয়ায় আছি?
তবে বিএসএমএমইউ এর ডাক্তাররা যে পর্যায়ের ফাঁকিবাজ তাতে বায়োমেট্রিক হাজিরায় কাজ হবে না। কারণ তারা আশপাশের প্রাইভেট হাস্পাতালগুলোতেই চেম্বার বা অপারেশন করেন। সকাল আটটায় চেক ইন দিয়ে বের হয়ে যাবেন আবার এসে চেক আউট দিবেন, উপরের ভদ্রলোকের মত। অফিসে সব সময়ই একটা তারিখবিহীন ছুটির আবেদন দিয়ে রাখেন। বলা তো যায় না, হুট করে যদি কোন বেয়াড়া সাংবাদিক এসে হাজিরা খাতা দেখতে চায়।
এক্ষেত্রে এই অধমের পরার্মশ হল উনাদের সবার পশ্চাদেশে একটা করে জিপিএস ট্র্যাকার লাগিয়ে দেয়া যেগুলো হাসপাতাল এলাকার একশো গজের বাইরে গেলেই বিকট শব্দে সাইরেন দিবে। এবং এর মনিটরিং করতে হবে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। কারণ বর্তমান বিএসএমএমইউ প্রশাসনের কাছে যতবারই কোন দাবি দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছি, ততবারই তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়েছেন।
সুতরাং উনাদের হেদায়াতের জন্য উপরে আল্লাহ আর নিচে প্রধানমন্ত্রী, এই দুইজন ছাড়া কারো কাছে আমাদের কিছু চাওয়ার নাই।
(লেখকের ফেসবুক টাইম লাইন থেকে নেয়া)
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ