ডা. রাসেল চৌধুরী :
সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রলীগ রাজনীতির গুনগত মান নিয়ে সবাই সন্দিহান।
এখানে রাজনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ছাত্র আজকের যুগে কেনো ছাত্র রাজনীতি করেন?
আপনি যদি সদ্যগঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন প্রায় সবাই একসময়ের তুখোড় ছাত্ররাজনীতিবিদ ছিলেন।
তাঁরা ছাত্রলীগের আতুঁড়ঘরে রাজনীতির হাতেখড়ি নিয়েছিলেন, তারপর ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে, তাঁদের পারিবারিক উত্তরাধিকার লাগেনি ।
কিন্তু এদের প্রায় সবাই সত্তরের দশকের, গুটিকয়েক আশির দশকের, মানে আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি করতেন।
এরপর কিন্তু বাকিরা আসছেন না বা আসার পথ রুদ্ধ। সবচেয়ে বড় কারণ? পরিবারতন্ত্রের সোনার চামুচ, এরপর প্রাক্তন আমলাতন্ত্রের ঠাঁটবাট, তারপর ব্যবসায়ীর কড়কড়ে টাকার নোট।
তাহলে ছাত্রনেতারা কি করবেন? যেহেতু তাঁদের প্রায় কারো সামনেই কোনো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্ল্যান নেই, তাই তাঁরা বেছে নেন সন্ত্রাসের পথ, টেন্ডারবাজদের মাসলম্যান পদবী বা প্রভাব খাটিয়ে টুকটাক চাকরি বা ব্যবসা। কয়েক হাজার বর্গফুটের ক্যাম্পাসকেই তাঁরা মনে করেন রাজত্ব।
তাঁদের অনুসারীরাও একই পথের পথিক হবেন জেনেই রাজনীতি করেন। ফলে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় এই হচ্ছে গত ৩০ বছরের ছাত্র রাজনীতি।
মন্ত্রীর পরিবার থেকে মন্ত্রী, এমপির পরিবার থেকে এমপি, সভাপতির পরিবার থেকে সভাপতি হবেন।
তাঁদের কোনো ছাত্ররাজনীতি করা লাগবে না, তাঁরা স্কুল পড়বেন ইংলিশ মিডিয়ামে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর কথা লেখা নেই, মুক্তিযুদ্ধের কথা লেখা নেই। এরপর পড়বেন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে এদেশের কৃষি বা শিল্পের কথা লেখা নেই।
কিন্তু ফিরে এসে হবেন ছাত্রনেতাদের নেতা, এমপি, মন্ত্রী, নীতিনির্ধারক, মেয়র সব।
ঢাকার দুই সিটির মেয়র প্রার্থীদের দেখুন। দক্ষিণে হানিফপুত্র সাঈদ খোকন, শেখ মণিপুত্র ফজলে নূর তাপস, সাদেক খোকা পুত্র ইশরাক হোসেন। উত্তরে আবদুল আওয়াল পুত্র তাবিথ আওয়াল, ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম।
এদের কেউ ছাত্ররাজনীতি করেছেন?
তাহলে ঢাকায় গত ৩০ বছর যারা মহানগর ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন তাঁদের কি অর্জন? তাহলে কেনো এদেশের মেধাবী, রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা ছাত্ররাজনীতি করবেন?
প্রশ্নটার জবাব না পেলে এদেশের ছাত্ররাজনীতি কদর্য থেকে আরো কদর্যকর হবে। “যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ” প্রবাদ কিন্তু এদেশের ছাত্র রাজনীতির জন্য মিথ্যে নয় বরং তিতা সত্য।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ।
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ