সেলিম আহমদ তালুকদার : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঈনুল হক কলেজের দুই ছাত্রীকে কোদালের হাতল দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নাঈমা আক্তার ও তাসলিমা খাতুন। তারা দুজনই সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে অধ্যক্ষের নির্মম আঘাতের প্রতিবাদে কলেজের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে জয়নগর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এলাকার অভিভাবকরা এ অমানবিক আচারণে ফুঁসে উঠছেন। তারা কলেজের শান্তি শৃংখলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানা যায়, মইনুল হক কলেজে এইচ এস সি ২০১৮-১৯ ইং শিক্ষাবর্ষে ১৬০ জন পরীক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয়।তার মধ্যে ৬৫ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয় এবং বাকিরা অকৃতকার্য হয়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীরা এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশ নিতে তাদেরকে সুযোগ করে দেয়ার জন্য অধ্যক্ষ ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হকের দ্বারস্থ হন। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ পুনরায় শুধু ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষার সুযোগ দেন। সে পরীক্ষায়ও অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা ৫০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৬ পর্যন্ত নম্বর পায়। তখন তিনি তাদেরকে বোর্ড পরীক্ষায় অংগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
পরে আবারো অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিতে কলেজে যায়। কলেজে এ সময় অধ্যক্ষ কোদাল হাতে ফুলের বাগানের পরিচর্যার কাজ করছিলেন। ফেল করা শিক্ষার্থীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তিনি উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে সাথে থাকা কোদালের হাতল দিয়ে শিক্ষার্থী দু’জনকে আঘাত করেন। আহত এ দুই শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহত এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষ নাঈমা আক্তার জানায়, টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে মাটি কাটার কোদালের হাতল দিয়ে তাদের দুজনকে আঘাত করেন। অপর আহত শিক্ষার্থী তাসলিমা খানম একই কথা বলেন।
অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, যারা অধ্যক্ষের পছন্দ সেই সব শিক্ষার্থীদেরকে তিনি পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিয়েছেন। পরীক্ষার খাতা চেক করলেই হয়তো এর প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে এবং যেসব শিক্ষাথী অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে পূর্বের প্রশ্ন পত্রে আবারো ইংরেজী পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। পূর্বের প্রশ্ন পত্রে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীরা এত কম নম্বর পেতে পারে না। এটিও যাচাই বাছাই করার দাবী জানান তারা।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কলেজের টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে হট্টগোল করে আঘাত পেয়ে এর দায় আমার উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার মো. কামরুল হাসান বলেন, দুটি মেয়ের পায়ে ও কোমরে ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাদের সুচিকিৎসা চলছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সহিদুর রহমান সময় জার্নালকে বলেন, আমি হাসপালের জরুরি বিভাগে আহতদের দেখতে যাই। অভিযোগ পেলে সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
সময় জার্নাল/সুনামগঞ্জ
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ