১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধ এক ভিন্ন মাত্রা পেতে শুরু করে। বর্ষা, শরত আর হেমন্ত পেরিয়ে শুরু হয় শীতের মৌসুম। গ্রাম-বাংলাজুড়ে শীত নামে। কিন্তু শীত নেই মুক্তিকামী বীর বাঙালির। হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করতে দেহের রক্ত যেন টগবগিয়ে ফুটছে। একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে চারিদিকে বীর বাঙালির বিজয়, আর পাকহানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর। দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যুদস্ত হতে থাকে উর্দুভাষী হানাদাররা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে- সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরো দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।
হানাদার পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিজয়ের সুঘ্রাণের সঙ্গে সঙ্গে মনপ্রাণ উজার করে সর্বাত্মক যুদ্ধে মনোনিবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় মিত্র বাহিনী। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী চারদিক দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে।
ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর মিলিত প্রত্যাঘাত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ ও নৌবাহিনীর অবরোধের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের চিত্র এভাবে আমূল পরিবতির্ত হয়। ভারত গেরিলা বেষ্টিত ঢাকায় ফাইটার দিয়ে সব দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। প্রায় ৮০০০ গেরিলা সারা শহরে সক্রিয় ছিল। গুল টেক্সটাইল মিলসে মুক্তিফৌজের গেরিলারা শত্রুদের বাংকারে হামলা চালিয়ে ২৭ সৈন্যকে হত্যা করলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সেই এলাকা থেকে পিছু হটে।
১১ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর এইদিন বিকাল ৩টার সময় হানাদার বাহিনীর কামালপুর ঘাঁটির সেনারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। নিয়মিত বাহিনীর ২২০ জন সদস্য বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ বন্দী হয়। এই অবরোধ চলাকালে তারা ৭ দিন বাইরে আসার চেষ্টা করলে বিপুল বাধার সম্মুখীন হয়ে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তিনদিন ধরে কামালপুর থেকে মুক্তি বাহিনীর অবরোধ ভেঙ্গে পাক বাহিনী বের হয়ে যাবার চেষ্টা করলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। কামালপুরের পতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাক বাহিনী ময়মনসিংহের মেঘালয় সীমান্তের সব এলাকাতে মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত পশ্চাদপসারণ করে।
জামালপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় মুক্তিবাহিনী অভিযান করার জন্য সমবেত হয়। ভালুকা থানার চাপড়াবাড়ী এলাকায় রাজাকারদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে ৩ জন রাজাকার হত্যা করা হয়। একই দিন কোম্পানি কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ ও প্লাটুন কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ একদল মুক্তিসেনা নিয়ে কাঁঠালী ও বাশিল এলাকায় পাক বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে ৭ জন পাকসেনা ও ১০ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয় ।
৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল সিআর দত্ত এবং জেড ফোর্সের মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেটের কানাইঘাট দখলের পর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেন। ৩নং সেক্টরের মুক্তি বাহিনী শমসের নগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করে।
৮নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর দখল করে যশোরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।
ফেসবুকের মাধ্যমে মতামত জানানঃ